বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ বর্জন কেন্দ্র দখলে ভোট

বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ বর্জন কেন্দ্র দখলে ভোট

 


বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ, কেন্দ্র দখল, ককটেল বিস্ফোরণ ও ভোট বর্জনের মধ্যদিয়ে চতুর্থ ধাপের পৌরসভা নির্বাচনে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। অন্তত ১১টি পৌরসভায় এসব ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে চট্টগ্রামের পটিয়ায় এক কাউন্সিলর প্রার্থীর ভাই খুন হয়েছেন। বেশ কয়েকটি পৌরসভায় গোলাগুলির ঘটনাও ঘটেছে। ভোট দিতে গিয়ে গোলাগুলির এক পর্যায়ে ৭০ বছর বয়স্ক একজন নারীও গুলিবিদ্ধ হন। ভোটকেন্দ্র দখল ও সংঘাতের ঘটনায় তিনটি পৌরসভার সাতটি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করেছেন সংশ্লিষ্ট প্রিসাইডিং অফিসাররা। বেশ কয়েকটি পৌরসভায় বিএনপির প্রার্থীরা অনিয়মের অভিযোগ তুলে ভোট বর্জন করেন। বাকি পৌরসভাগুলোয় শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। যুগান্তর ব্যুরো, জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো সংবাদে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

রোববার ৩৪টি জেলার ৫৫টি পৌরসভায় ভোট অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে ২৯টিতে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ও ২৬টিতে কাগজের ব্যালটে ভোট হয়। নির্বাচন কমিশন আশা প্রকাশ করেছিল, চতুর্থ ধাপ থেকে পরবর্তী নির্বাচনগুলোয় বড় ধরনের সহিংস ঘটনা ঘটবে না। কিন্তু এ ধাপের নির্বাচনে ভোট চলাকালে কেন্দ্রের বাইরে সহিংসতায় একজনের প্রাণ গেছে। কেন্দ্র দখল ও অনিয়মের ঘটনায় যে সাতটির ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে সেগুলো হলো : নরসিংদী পৌরসভার চারটি, শরীয়তপুরের ডামুড্যা পৌরসভার দুটি ও নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী পৌরসভার একটি।

তবে এ ধাপের পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ভোটগ্রহণ শেষে নির্বাচন ভবনে ইসি সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার বলেছেন, ভালো ভোট হয়েছে। চট্টগ্রামের পটিয়ায় নির্বাচনি সংঘাতে প্রাণহানির জন্য প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থীকে দায়ী করেন। তিনি দাবি করেন, খুনের ঘটনার পরও সেখানে ভোট দেওয়ার মতো পরিবেশ ছিল।

সচিব বলেন, পুরো দেশেই শান্তিপূর্ণভাবে ভোট হয়েছে। সাতটি কেন্দ্রের ভোট বন্ধ করা হয়েছে। বাকি কেন্দ্রগুলোয় শান্তিপূর্ণভাবে ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। রিটার্নিং কর্মকর্তাদের প্রতিবেদন ও গণমাধ্যমে পরিস্থিতি দেখে মনে হয়েছে ভালো ভোট হয়েছে। তিনি বলেন, পটিয়ায় ভোটকেন্দ্রের বাইরে দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে একজন মারা গেছেন। এটা নিঃসন্দেহে দুঃখজনক। প্রার্থীদের মধ্যে মারামারি হয়েছে ভোটকেন্দ্রের বাইরে, এটি ভোট গ্রহণে কোনো প্রভাব ফেলেনি। সেখানে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট হয়েছে। সংঘর্ষে একজন নিহত হওয়ার পর ভোটের পরিবেশ থাকে কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটি প্রার্থীদের মধ্যে বিচ্ছিন্ন ঘটনা। হঠাৎ করে হয়ে গেছে, একজন মারা গেছে। যারা ভোট দেওয়ার তারা ভোটকেন্দ্রে যাবে, যে জায়গায় মারামারি হয়েছে সেখানে যাবে না।

হুমায়ুন কবীর বলেন, যে দুই প্রার্থী মারামারি করেছে, খুনের দায় তাদের। কারণ, তারা নিজেরা মারামারি করেছেন খুন হয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রিসাইডিং কর্মকর্তা সবাই জানিয়েছেন, সেখানে ভোট দেওয়ার মতো পরিবেশ ছিল। রিটার্নিং কর্মকর্তার প্রতিবেদন অনুযায়ী, সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের দায়িত্ব পালন করেছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভোটকেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ছিলেন। তারা বাইরে গিয়ে ঝগড়া করেছেন, সেখানে একজন নিহত হয়েছেন। সেখানে আসলে ওই মুহূর্তে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হস্তক্ষেপ করার সুযোগ ছিল না।

প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চট্টগ্রামের পটিয়ায় ভোট চলাকালে কেন্দ্রের বাইরে কাউন্সিলর প্রার্থী আবদুল মান্নান ও সরোয়ার কামাল রাজিবের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ ও গোলাগুলি হয়। তারা দুজন আওয়ামী লীগ সমর্থক। সংঘর্ষের সময়ে প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে কাউন্সিলর প্রার্থী আবদুল মান্নানের ছোট ভাই আবদুল মাবুদ মারা যান। সংঘর্ষে আটজন আহত হন। একই জেলার চন্দনাইশে দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এতে দুপক্ষের অন্তত পাঁচজন গুলিবিদ্ধ হন। এর মধ্যে ৭০ বছর বয়স্ক আনজুমান খাতুনও রয়েছেন।

নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী পৌরসভায় আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র ও স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে একজন গুলিবিদ্ধ ও অন্তত ১০ জন আহত হন। এ সময় দুজন সাংবাদিকও আহত হন। চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ পৌরসভায় দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। এ সময় ভোটকেন্দ্রের পাশে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। সাতক্ষীরা পৌরসভার রসুলপুর কেন্দ্রে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে পাঁচজন আহত হন। হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে একটি কেন্দ্র দখল করতে হঠাৎ করে ৫০-৬০ জন যুবক লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালান। এতে আতঙ্কে ভোটাররা দিগ্বিদিক ছুটে পালান।

লালমনিরহাট পৌরসভায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ও বিএনপির মনোনীত মেয়র প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। নির্বাচন চলাকালে একজন সাংবাদিককে মারধর করেন সরকার সমর্থকরা। রাজশাহীর নওহাটা পৌরসভায় ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা কেন্দ্র দখল করতে গেলে স্থানীয়দের সঙ্গে সহিংসতা ঘটে। এতে কয়েকজন আহত হন। ময়মনসিংহের ফুলপুর পৌরসভায় দুটি কেন্দ্রে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। নরসিংদী পৌরসভায় একটি কেন্দ্রে দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় ভোটকেন্দ্রের ভেতরে ককটেলসদৃশ বস্তু নিক্ষেপ করা হয়। টাঙ্গাইলের কালিহাতী পৌরসভায় দুই মেয়র প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত চারজন আহত হয়েছেন।

এ ছাড়া অনিয়মের অভিযোগে ফরিদগঞ্জ, লালমনিরহাট, তাহিরপুর, মুন্সীগঞ্জ, জীবননগর ও বাগেরহাটসহ বেশ কয়েকটি পৌরসভায় বিএনপির প্রার্থীরা নির্বাচন বর্জন করেছেন। তবে বাকি পৌরসভায় শান্তিপূর্ণভাবে ভোট হয়েছে।

পটিয়ায় সংষর্ষে নিহত এক, আহত আট : চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, চট্টগ্রামের পটিয়া পৌরসভা নির্বাচনে দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এ সময় আবদুল মাবুদ (৫০) নামে একজন ছুরিকাঘাতে নিহত হন। রোববার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে পটিয়া পৌরসভার ৮ নম্বর দক্ষিণ গোবিন্দারখীল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত আবদুল মাবুদ গোবিন্দারখীল ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী আবদুল মান্নানের ছোট ভাই। এতে আরও আটজন আহত হয়েছেন। আহতরা হলেন : মো. হাসান (২৩), মোবাশ্বিরা জান্নাত (৩০), মো. ফাহিম (১৮), আবদুল আল মাহমুদ (১৮), নুসরাত (২০), জালাল উদ্দিন (২৫), মো. আশেক (২৫) ও মো. ইদ্রিস (৮০)। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান চালিয়ে ওই কেন্দ্রের দুই কাউন্সিলর প্রার্থী আবদুল মান্নান ও সরোয়ার কামাল রাজিবকে আটক করে। দুই প্রার্থীই আওয়ামী লীগ সমর্থক বলে জানা গেছে। পুলিশ জানায়, ভোট শুরুর প্রায় চার ঘণ্টা পর দক্ষিণ গোবিন্দারখীল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের বাইরে সংঘর্ষ শুরু হয়। কাউন্সিলর প্রার্থী আবদুল মান্নান ও সারওয়ার কামাল রাজিবের সমর্থকদের মধ্যে প্রথমে ধাওয়া-পালটা ধাওয়া এবং পরে সংঘর্ষে রূপ নেয়। এ সময় সারওয়ার কামাল রাজিবের সমর্থকরা মাবুদকে ছুরিকাঘাত করে। স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে পটিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। সংঘর্ষের পর ওই কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ বন্ধ করে দেন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা। পরে দুই কাউন্সিলর সমর্থকরা কেন্দ্রের বাইরে বিভিন্ন ব্যানার-পোস্টারে আগুন লাগিয়ে দেয়। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। প্রত্যক্ষদর্শী মোহাম্মদ এরশাদ জানিয়েছেন, সকাল থেকে সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ চললেও দুপুরের পর দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে কাউন্সিলর প্রার্থী আবদুল মান্নানের ভাই মাবুদ মারা গেছেন। আহতদের পটিয়া হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইনামুল হাসান জানিয়েছেন, গোলাগুলি ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার পর দুই কাউন্সিলর প্রার্থীকে আটক করা হয়েছে। দুই প্রার্থীকে আটকের পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

সোনাইমুড়ীতে আহত অর্ধশত : নোয়াখালী প্রতিনিধি জানান, নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী পৌরসভা নির্বাচনে বোমা বিস্ফোরণ ও সহিংসতায় একজন গুলিবিদ্ধসহ ৫০ জন আহত হয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সোনাইমুড়ি পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের সুফিয়া খাতুন দারুসসুন্নাহ মাদ্রাসা কেন্দ্রের পাশে মানবজমিন পত্রিকার সোনাইমুড়ী প্রতিনিধি ও ওয়ার্ডের পৌর কাউন্সিলর (ডালিম মার্কা) প্রার্থী আমিনুল ইসলাম মানিকের প্রধান নির্বাচনি কার্যালয়ে প্রতিপক্ষ ভাঙচুর চালায়। এ সময় অর্ধশতাধিক ভোটার আহত হন। আহতদের মধ্যে সোনাইমুড়ী উপজেলার বাহারকুট গ্রামের আবদুল হকের ছেলে মোহন (১৮), আমিরাবাদ এলাকার আবুল হাসেমের ছেলে সালাউদ্দিন (২৭), উলুপাড়া এলাকার স্বপনের ছেলে মনির (২২), মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মতিনের সন্তান ও সাংবাদিক এবিএম ছিদ্দিককে বজরা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। জানা গেছে, ভোটকেন্দ্রের বাইরে দুই কাউন্সিলর প্রার্থীদের সমর্থকরা সহিংসতার এই ঘটনা ঘটায়। তারা একটি ককটেল বিস্ফোরণ করে কিছু ভোটারকে ছত্রভঙ্গ করে দেয় এবং গুলি ছোড়ে। এতে মোহন (১৮) নামে এক যুবক গুলিবিদ্ধ হয়। এ সময় পৌরসভা ৮নং ওয়ার্ডের কাঁঠালিয়া কেন্দ্রের ভোট বন্ধ করে দেওয়া হয়। জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ রবিউল আলম জানান, অনিয়মের অভিযোগে এই কেন্দ্রের ভোট বন্ধ করে কেন্দ্রের নির্বাচনি সরঞ্জামাদি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। নোয়াখালী পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন বলেন, কেন্দ্রের বাইরে কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ধাওয়া-পালটা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

চুনারুঘাটে হামলা চালিয়ে কেন্দ্র দখল : হবিগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, হবিগঞ্জের চুনারুঘাট পৌরসভা নির্বাচনে একটি কেন্দ্রে ভোটরদের ওপর হামলা চালিয়ে দখলে নেয় একদল দুর্বৃত্ত। এ ঘটনায় আতঙ্কিত ভোটারদের কেন্দ্র থেকে চলে যেতে দেখা গেছে। হাজি ইয়াছিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে রোববার দুপুরে ঘটনাটি ঘটে। এই কেন্দ্রে সকাল থেকে শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ চলছিল। বেলা আড়াইটার দিকে হঠাৎ ৫০-৬০ জন যুবক লাঠিসোঁটা নিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশ করে হামলা চালায়। পরে র‌্যাব, পুলিশ দুর্বৃত্তদের ধাওয়া করলে তারা পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে ঘটনার পর ওই কেন্দ্র পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান, জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাদিকুল ইসলাম। হামলার ঘটনায় ওই কেন্দ্রে ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়। ফলে ভোটারশূন্য হয়ে পড়ে কেন্দ্রটি। বিএনপির দাবি, ওই কেন্দ্রটি বিএনপি প্রার্থী নাজিম উদ্দিন শামসুর বাড়ির কেন্দ্র। যে কারণে ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়াতেই এ হামলা চালানো হয়েছে। এ ব্যাপারে কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মাসুদ রানা বলেন, হঠাৎ করে একদল বহিরাগত দুর্বৃত্ত এসে হামলা চালায়। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে।

চট্টগ্রামের চন্দনাইশে গুলিবিদ্ধ পাঁচ : চন্দনাইশ (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি জানান, চট্টগ্রামের চন্দনাইশ পৌরসভা নির্বাচনে দুই পক্ষের গোলাগুলিতে পাঁচজন গুলিবিদ্ধ হন। পৌরসভার ৩নং পূর্ব জোয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র এবং ৮নং দক্ষিণ গাছবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে এই ঘটনা ঘটে। জোয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের বাইরে সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী হেলাল উদ্দিন (পাঞ্জাবি প্রতীক) ও আনোয়ারের (উট পাখি প্রতীক) মধ্যে কথা কাটাকাটির জেরে দুই পক্ষের সমর্থকরা একে অপরকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এতে উভয় পক্ষের চারজন গুলিবিদ্ধ হন। আহতরা হলেন হাবিব (২০), অভি (২১), মেজবাহ (৩৪) ও ফোরকান উদ্দিন (২৮)। ৮নং দক্ষিণ গাছবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে বেলা ১১টায় কাউন্সিলর প্রার্থী আবু তৈয়বের সমর্থকরা গুলি চালালে আনজুমান খাতুন (৭০) গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন।

ফরিদগঞ্জে সংঘর্ষে আহত ১৩ : ফরিদগঞ্জ (চাঁদপুর) প্রতিনিধি জানান, ফরিদগঞ্জ পৌরসভার কাছিয়ারা মহিলা আলিম মাদ্রাসা কেন্দ্রে দুই কাউন্সিলর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। এ সময় কেন্দ্রের পাশে চারটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। এতে গুরুতর আহত কাউন্সিলর প্রার্থী মো. আলী হায়দার পাঠানকে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ২নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলরদের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্রে করে কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংর্ঘষে তিনজন আহত হন। এদিকে নির্বাচনে ভোট ডাকাতির অভিযোগ করে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ইমাম হোসেন নির্বাচন বর্জন করেন ভোট শুরুর কয়েক ঘণ্টা পরই।

আখাউড়ায় নৌকায় প্রকাশ্যে ভোট নেওয়ার অভিযোগ : ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে নৌকায় প্রকাশ্যে ভোট নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী নুরুল হক ভূইয়া। আখাউড়া রেলওয়ে সরকারি উচ্চবিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে রোববার সকালে তিনি এই অভিযোগ করেন। একই কেন্দ্র পরিদর্শনে এসে নৌকার সমর্থক ও এজেন্টদের বিরুদ্ধে বিএনপির এজেন্টদের বের করে দেওয়ার অভিযোগ করেছেন বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী জয়নাল আবেদীন আব্দু। তবে এ ব্যাপারে আখাউড়া উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা জহুরুল আলম বলেন, আমাদের কাছে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। ভোটগ্রহণ সুষ্ঠুভাবেই হচ্ছে।

লালমনিরহাটে হামলা-সংঘর্ষ : লালমনিরহাট প্রতিনিধি জানান, বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পালটা ধাওয়ার মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে লালমনিরহাট পৌরসভার ভোট। জেলার পাটগ্রাম পৌরসভায় বেলা ৩টার দিকে অনিয়মের অভিযোগ তুলে নির্বাচন বয়কট করেন বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী। লালমনিরহাট পৌরসভায় সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরুর পরেই কয়েকটি কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থক ও বিএনপি প্রার্থীর সমর্থদের মধ্যে ধাওয়া-পালটা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। সকালে শহরের সাপটনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সৈয়দ সুফি তাহেরুল ইসলাম নামে এক সাংবাদিককে মারধর করেন সরকার সমর্থিত প্রার্থীর সমর্থকরা। একই সময়ে হাবিবুর রহমান হাবীব নামের জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক এক নেতাও হামলার শিকার হন।

সাতক্ষীরায় আহত পাঁচ : সাতক্ষীরা প্রতিনিধি জানান, কয়েকটি বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ ও পুলিশের লাঠিচার্জের ঘটনা ছাড়া মোটামুটি শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয় সাতক্ষীরা পৌর নির্বাচন। সকালে শহরের রসুলপুর কেন্দ্রে দুই পক্ষের সংঘর্ষে আহত হন আগরদাঁড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান হবি। তাকে সাতক্ষীরা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। নবনূর প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে পুলিশের লাঠিচার্জে আহত হন জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ফিরোজ আহমেদ, আবদুস সালামসহ চারজন।

ফুলপুরে ককটেল বিস্ফোরণ : ফুলপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি জানান, ময়মনসিংহের ফুলপুর পৌরসভা নির্বাচনে শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণ হলেও দুটি কেন্দ্রে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। আমুয়াকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ফুলপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রের আশপাশ এলাকায় নৌকার পক্ষে মিছিলসহ অসংখ্য ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। আমুয়াকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে উদ্ধার হওয়া কয়েকটি ককটেল আইনশৃঙ্খলা বাহীনিকে নিক্রিয় করতে দেখা গেছে।

রাজশাহীর নওহাটায় কেন্দ্র দখল : রাজশাহী ব্যুরো জানায়, রাজশাহীর চারটির মধ্যে তিনটি পৌরসভায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। ভোটাররা স্বাচ্ছন্দ্যে ভোট দিয়েছেন। তবে নওহাটা পৌরসভায় নির্বাচনে গোলযোগ দেখা গেছে। এখানে ভোটকেন্দ্র দখল, জাল ভোট এবং ধাওয়া-পালটা ধাওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে। পবার নওহাটা পৌরসভায় বেশির ভাগ ভোটকেন্দ্র দখলে নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। নৌকার প্রার্থীর সমর্থকরা ভোটকেন্দ্র দখলে নিয়ে জাল ভোট দিয়েছেন। বেলা ১১টার দিকে বাগধানী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র দখল করতে যান ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীরা। নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর এ সমর্থকদের তখন অন্য প্রার্থীর সমর্থক এবং স্থানীয়রা ধাওয়া দেন। এর ভেতরে পড়ে ইটের আঘাতে আহত হন বাংলাভিশনের রাজশাহীর ক্যামেরাপারসন জসিম উদ্দিন। দুই পক্ষের আরও কয়েকজন আহত হন।

মুন্সীগঞ্জের মিরকাদিমে বিএনপির ভোট বর্জন : স্টাফ রিপোর্টার (যুগান্তর) জানান, মুন্সীগঞ্জের মিরকাদিম পৌরসভা নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ এনে ভোট বর্জন করেছেন বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মিজানুর রহমান মিজান। রোববার বেলা ৩টার দিকে তিনি এই ঘোষণা দেন। এ সময় তিনি কেন্দ্র থেকে এজেন্ট বের করে দেওয়া, জোরপূর্বক নৌকা প্রতীকে ভোটপ্রদানসহ নানা অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ভোটে অনিয়মের বিষয়ে প্রশাসনকে বারবার অবহিত করলেও কেন্দ্রে অনিয়ম অব্যাহত থাকে। আমার স্ত্রী ভোট দিতে গেলে তাকেও জোরপূর্বক নৌকায় ভোট দিতে বাধ্য করা হয়।

আলমডাঙ্গা ও জীবননগরে বিএনপি প্রার্থীর ভোট বর্জন : চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি জানান, নির্বাচনে কারচুপি এবং পোলিং এজেন্ট বের করে দেওয়ার অভিযোগ তুলে ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা ও জীবননগর পৌর নির্বাচনে ধানের শীষের দুই মেয়র প্রার্থী। রোববার সকাল সাড়ে ৯টায় জীবননগরের ধানের শীষ প্রার্থী শাহাজাহান কবির এবং দুপুর সাড়ে ১২টায় আলমডাঙ্গার ধানের শীষ প্রার্থী মীর মহিউদ্দিন ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন।

নরসিংদীতে জাল ভোট : নরসিংদী প্রতিনিধি জানান, বিচ্ছিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে নরসিংদী পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে জাল ভোট দেওয়া, ককটেলসদৃশ্য বস্তু নিক্ষেপ এবং ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে ধাওয়া-পালটা ধাওয়া ও জাল ভোট দেওয়ার অভিযোগে নরসিংদী পৌরসভা এলাকার চারটি কেন্দ্রে নির্বাচন স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন।

বাগেরহাটে অনিয়মের অভিযোগ : বাগেরহাট প্রতিনিধি জানান, অনিয়মের অভিযোগ তুলে বাগেরহাট প্রেস ক্লাবে দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী সাইদ নিয়াজ হোসেন শৈবাল। তিনি বলেন, বিভিন্ন কেন্দ্রে নৌকার এজেন্টরা ভোট প্রদানের গোপন কক্ষে ভোটারদের সঙ্গে প্রবেশ করে প্রেস বাটন চেপে নৌকার ভোট নিশ্চিত করছে।

বাউফলে ছাত্রলীগ কর্মীসহ আহত ১০ : বাউফল (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি জানান, উপজেলার কালিশুরী বন্দরের চৌরাস্তা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় নির্বাচনি শোডাউনে দুই ছাত্রলীগ কর্মীকে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। এছাড়া পৃথক ঘটনায় নওমালা ইউনিয়নের নগরের হাট এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়েছেন। অপরদিকে এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে শনিবার রাতে নওমালা ইউনিয়নের নগরের হাট এলাকায় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন বিশ্বাস ও উপজেলা আওয়ামী লীগের (একাংশের) সাংগঠনিক সম্পাদক ও নওমালা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহজাদা হাওলাদারের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এ ঘটনায় রুবেল (৩০), কামাল (২৮) আফজাল সরদার (৩১) কবির মৃধা (৩৫) রুমন (২৫), পাবেল মৃধা (৩৪)-সহ উভয় পক্ষের ১০ জন আহত হন।

রাজশাহীর চারঘাটে সংঘর্ষ : চারঘাট (রাজশাহী) প্রতিনিধি জানান, রাজশাহীর চারঘাটে পোস্টারের ওপর পোস্টার টানানো এবং পোস্টার ছেঁড়াকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ-বিএনপির মধ্যে ধাওয়া-পালটা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনায় উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রায়হানুল হক রানা বাদী হয়ে জেলা যুবদলের যুগ্ম-সম্পাদক জিল্লুর রহমান বিপ্লবকে প্রধান আসামি করে একটি মামলা করেছেন। ওই মামলায় ১০১ জনের নাম উল্লেখ এবং তিন শতাধিক অজ্ঞাতনামকে আসামি করা হয়েছে। আটক করা হয়েছে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী জাকিরুল ইসলাম বিকুলের ব্যক্তিগত সহকারী শামিম আহম্মেদসহ চারজনকে।

Post a Comment

0 Comments