বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে আমরণ অনশনে বসা দুই শিক্ষার্থীর মধ্যে একজন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাঁকে স্যালাইন দিয়ে রাখা হয়েছে। অন্যজনও ধীরে ধীরে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।
অসুস্থ হওয়া ওই শিক্ষার্থীর নাম মোহাম্মদ মোবারক হোসেন ওরফে নোমান। তিনি বাংলা ডিসিপ্লিনের (বিভাগ) শিক্ষার্থী। টানা ৪১ ঘণ্টা না খেয়ে থাকার ফলে আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা বাইরে থেকে চিকিৎসক এনে পরীক্ষা করান। চিকিৎসক তাঁর শরীরে স্যালাইন পুশ করে রেখেছেন। অনশনরত অপর শিক্ষার্থী ইতিহাস ও সভ্যতা ডিসিপ্লিনের ইমামুল ইসলামের অবস্থাও খুব বেশি ভালো নয়। তাঁকেও যেকোনো সময় স্যালাইন দেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে।
অনশনরত ওই দুই শিক্ষার্থী জানান, অসুস্থ হয়ে পড়ার পরও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোনো ধরনের চিকিৎসা সহায়তা তাঁরা পাননি। এ কারণে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বাইরে থেকে চিকিৎসক এনে তাঁদের চিকিৎসা করিয়েছেন।
শিক্ষকদের সঙ্গে অসদাচরণ, তদন্ত কমিটিকে সহযোগিতা না করাসহ বিভিন্ন কারণে ওই দুই শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা বোর্ড। ওই বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে তাঁরা আমরণ অনশন কর্মসূচি শুরু করেছেন।
গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে তাঁরা অনশন কর্মসূচি শুরু করেন। এর আগে গত রোববার সন্ধ্যা ৭টা থেকে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের জন্য ৪৮ ঘণ্টার সময় বেঁধে দিয়ে একই স্থানে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেছিলেন ওই দুই শিক্ষার্থী।
গত বছরের ১ ও ২ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বেতন-ফি কমানো, আবাসন সংকট নিরসনসহ পাঁচ দফা দাবি আদায়ে শত শত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অনশনে বসা ওই দুই শিক্ষার্থীও আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন। ওই সময় দুই শিক্ষকের সঙ্গে অসদাচরণ করার অভিযোগে তাঁদের দুজনকে বহিষ্কার করা হয়। তবে ওই দুই শিক্ষার্থী দাবি করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগ ভিত্তিহীন ও প্রহসনমূলক। যেহেতু তাঁরা কোনো অন্যায় করেননি, তাই তাঁরা একাডেমিক কাউন্সিলে আত্মপক্ষ সমর্থন করে আবেদন করবেন না।
এদিকে খুলনা নগরের শিববাড়ী মোড়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কর্তৃক নিয়োগ–বাণিজ্য, স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি, শিক্ষক ও শিক্ষার্থী বহিষ্কারসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছেন খুলনার সচেতন নাগরিক ও সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা। আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে ওই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধন ও সমাবেশ থেকে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করার দাবি জানানো হয়েছে।
এ ছাড়া খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ শিক্ষক ও ২ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারের প্রচেষ্টাকে প্রশাসনের স্বৈরাচারী আচরণেরই বহিঃপ্রকাশ উল্লেখ করে তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়েছে খুলনার বাম গণতান্ত্রিক জোট। এক বিবৃতি দিয়ে জোটের নেতারা বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অপরিহার্য অংশ হচ্ছে শিক্ষার গণতান্ত্রিক পরিবেশ। যেখানে মুক্ত চিন্তা ও কথা বলার, দাবিদাওয়া পেশ ও ন্যায়সংগত আন্দোলন করার অধিকার থাকবে শিক্ষার্থীদের। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ওই স্বৈরতান্ত্রিক বিকার, সুশিক্ষার জন্য কোনো অবস্থায় কাম্য হওয়া উচিত নয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা ক্ষুণ্ন হচ্ছে।





0 Comments
Thanks your Response.