বড় চাচার নবজাতক সন্তানকে দেখতে গত বৃহস্পতিবার বাড়ির পাশের হাসপাতালে গিয়েছিল সামনুন ইসলাম। কিন্তু হাসপাতাল থেকে বেরিয়েই নিখোঁজ হয় ১১ বছরের এই শিশু। ওই দিন রাতেই মুঠোফোনে তার পরিবারের কাছে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিরা। পরদিন অপহরণকারীদের চার দফায় ৬০ হাজার টাকাও দেয় পরিবার। কিন্তু তাতেও রক্ষা পায়নি শিশুটি। রোববার দুপুরে তার লাশ মেলে মিরপুরের শাহ আলী প্লাজার ১৪ তলার ছাদে।
মিরপুর মডেল থানা-পুলিশ এবং গোয়েন্দা পুলিশের মিরপুর বিভাগের মাদক ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার দল তিন দিনের টানা অভিযানে সামনুন হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে শনিবার তার ফুফাতো ভাইসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে। এর মধ্যে ইউসুফ নেওয়াজ নামের জড়িত একজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। বাকি তিনজনকে সাত দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন, সামনুন হত্যার কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে তাঁরা পরিবারটিতে বহুবিবাহ, বিবাহবিচ্ছেদ ও মাদকাসক্তির একটি যোগসূত্র পেয়েছেন। বহু বছর আগ থেকে ঘটে আসা এসব ঘটনার চূড়ান্ত বলি হয়েছে শিশুটি।
গোয়েন্দা পুলিশের মিরপুর বিভাগের মাদক ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার দলের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার মো. তয়াছির জাহান প্রথম আলোকে বলেন, ইউনুছের এই আপত্তিতে ক্ষিপ্ত হন মাহফুজুর। তিনি ইউনুছের সৎছেলে সামনুনকে অপহরণের পরিকল্পনা করেন। এ কাজে তিনি যুক্ত করেন ইউনুছের বোন পলির ছেলে নূর আলমকে। পলির প্রথম স্বামীর ছেলে নূর আলম। মা–বাবার বিচ্ছেদের পর থেকে নূর আলম উচ্ছৃঙ্খল জীবন যাপন করছিলেন। মিরপুর ১০ নম্বর এলাকায় রাস্তার পাশে কাপড় বিক্রি করতেন নূর আলম। কিন্তু মাদকাসক্ত হওয়ায় সেই আয় দিয়ে সংসার চলছিল না।
তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, মাহফুজুর নিজেও মাদকাসক্ত। তিন মাস ধরে নূর আলমকে তিনি মাদক সেবনের জন্য টাকা দিয়ে আসছিলেন। এ কারণে মাহফুজুরের পরিকল্পনায় সামনুনকে অপহরণ করে হত্যার প্রস্তাবে নূর রাজি হন। এ কাজে যুক্ত করেন তাঁর তিন বন্ধু ইউসুফ নেওয়াজ, মো. খায়রুল ইসলাম ও ইয়াছিন আরাফাতকে। ওই তিনজনও আর্থিকভাবে সচ্ছল নন।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ইউসুফ নেওয়াজ বলেছেন, বৃহস্পতিবার নূর আলমের কথায় তিনি সামনুনকে ডেকে নিয়ে আসেন। এরপর নূর আলম ব্যাডমিন্টনের র্যাকেট ঠিক করানোর কথা বলে সামনুনকে নিয়ে শাহ আলী প্লাজায় যান। তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন মাহফুজুর রহমান। সিসিটিভি ক্যামেরায় ধরা পড়ে যাবেন মনে করে তাঁরা সিঁড়ি বেয়ে ছাদে ওঠেন। সেখানে পৌঁছানোর পরই সামনুনকে হত্যার পর লাশ সেখানে রেখে তারা কাপড়সহ কিছু জিনিসপত্র দিয়ে চাপা দিয়ে চলে যান।
পুলিশ কর্মকর্তা মো. তয়াছির জাহান প্রথম আলোকে বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় তাঁরা জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করেছেন। তাঁদের দেখানোমতেই ছাদ থেকে লাশ উদ্ধার করেছেন। গ্রেপ্তার খায়রুল ও ইয়াছিন পুরো ঘটনাটি জানতেন। তাঁরা অপহরণের নামে সামনুনের পরিবারের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন।




0 Comments
Thanks your Response.