ম্যারাডোনার অশেষ ভালোবাসায় শেষযাত্রা

ম্যারাডোনার অশেষ ভালোবাসায় শেষযাত্রা

Diego Maradona Secret Show

জীবনানন্দ দাশের কবিতা ম্যারাডোনার পড়ার প্রশ্নই ওঠে না। তবু ফুটবল ঈশ্বরের অভিলাষে যেন অনুরণিত হয়েছিলেন বাংলার নিসর্গপ্রিয় কবি। জীবনানন্দ চেয়েছিলেন ধানসিঁড়ির তীরে ফিরতে।

আর ম্যারাডোনা চেয়েছিলেন, ‘যদি মরে যাই, আমি চাইব পুনর্জন্ম নিতে। চাইব আবারও ফুটবলার হতে। আবারও হতে দিয়েগো আর্মান্দো ম্যারাডোনা। আমি এমন একজন খেলোয়াড়, যে মানুষকে আনন্দ দিয়েছে। আমার কাছে এটাই ঢের।’

একদম সত্যি কথা। আমজনতাকে অশেষ আনন্দ দিয়েছে তার মনোহর ও মদির ফুটবলশৈলী। কিন্তু যিনি আনন্দ দেন, তিনি কাঁদানও। নাকি তার অস্ফুট স্বরের কান্না অবারিত আনন্দধারা হয়ে উদ্বেল করে আপামরসাধারণকে।

যেমন ম্যারাডোনার প্রয়াণে বিশ্বময় ফুটবলানুরাগীদের দু’চোখে প্লাবন। কে যেন বলেছেন, ম্যারাডোনা নামটার মধ্যে একটা আবেগ জড়িয়ে রয়েছে। তার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু বলেছিলেন, ‘দিয়েগোর সবচেয়ে বড় শত্রু ওর আবেগ।’

তাকে ঘিরে যাদের মুগ্ধতা ছিল আদি ও অকৃত্রিম, তারাও অন্তবিহীন আবেগে ভেসে গেছেন খড়কুটোর মতো। সেই আবেগের আবরণ অতিঅবশ্যই ফুটবলময়।

শিশুর সারল্য আর বুকভরা আবেগে ঋদ্ধ মানুষটি ছিলেন কিউবার নেতা ফিদেল কাস্ত্রোর গুণমুগ্ধ ভক্ত। কাকতালীয়ভাবে কাস্ত্রোর প্রয়াণ দিবসে ম্যারাডোনাও যাত্রা করলেন অনন্তলোকে।

আর্জেন্টিনা কাঁদছে। সেই কান্নার রং বুঝি সাদা-নীল। বৃহস্পতিবার সকালে আর্জেন্টিনাবাসীর ঘুম ভেঙেছে বিষণ্নতার চাদর সরিয়ে। সেই চাদরের ভাঁজে ভাঁজে বেদনার চর।

বুয়েনস আয়ার্সে প্রেসিডেন্সিয়াল প্যালেস কাসা রোসাদায় কফিনে শুয়ে আছেন কিংবদন্তি ফুটবলার। অশ্রুর প্লাবনে তাকে শেষবার দেখতে ভিড় জমাচ্ছে হাজার হাজার মানুষ।

অনেকের গায়ে বিশ্বকাপজয়ী ম্যারাডোনার ১০ নম্বর জার্সি। আর্জেন্টিনার সাদা-নীল জাতীয় পতাকা ও তার ১০ নম্বর জার্সিতে ঢাকা কফিন।

জনতার ঢল নামার আগে প্রভাতে ম্যারাডোনার পরিবার ও ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা এসে তাকে দেখে গেছেন শেষবারের মতো। শেষ দেখাটা দেখার জন্য বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়নি তাদের।

আগের রাতে প্লাজা ডি মায়োতে হাজার হাজার ভক্ত গান গেয়ে শ্রদ্ধা জানায় ম্যারাডোনাকে। ফুলে ফুলে, ভালোবাসায় ’৮৬ বিশ্বকাপজয়ী আর্জেন্টাইন ফুটবল জাদুকরকে স্মরণ করে ভক্তরা।

তাদের সামলাতে হিমশিম খেতে হয় পুলিশকে। রাজধানী বুয়েনস আয়ার্সের উপকণ্ঠে বৃহস্পতিবার ফুটবলের বংশীবাদক ম্যারাডোনার শেষকৃত্য হওয়ার কথা।

জার্দিন দে পাজ গোরস্থানে সমাধিস্থ হবেন চিরকাল শিশু থেকে যাওয়া আর্জেন্টাইন ফুটবল লিজেন্ড। সেখানেই শুয়ে আছেন ম্যারাডোনার বাবা-মা।

Post a Comment

0 Comments